“সিয়ান আনোস দো সোলেদাদ” বা ‘ নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ উপন্যাসটি মূলত বুয়েন্দিয়া পরিবারের ছয়টি প্রজন্মের কাহিনি।
নিঃসঙ্গতার একশ বছরের মাধ্যমে মার্কেজ আমাদের এমন একজগতে নিয়ে যান, যেখানে দিনে দুপুরে চাদরে জড়িয়ে বাতাসে উড়ে যায় এক নারী, যে কি না সৃষ্টিছাড়া সৌন্দর্যের অধিকারী, যেখানে একটানা চার বছর এগারো মাস দুই দিন ধরে অনবরত ঝরে বৃষ্টি, জন্ম নেয় শূয়রের লেজসহ শিশু। অথচ পাঠকের কাছে কখনো এসব অবাস্তব মনে হয় না। বরং এটাই হওয়া উচিত বলে মনে হয়।
মার্কেজ সাজিয়েছেন একেকটা দীর্ঘ বাক্যের পর বাক্য অনন্য কাব্যিকতার এক মহাসমুদ্রের স্রোতের পর স্রোতের মতো। আর, রাবাসা এবং জি এইচ হাবীব সেই মহাসমুদ্রকেই যেন স্থানান্তরিত করলেন নিপুণ দক্ষতা আর পরিশ্রমে। উপন্যাসটি মূলত বুয়েন্দিয়া পরিবারের ছয় প্রজন্মের ইতিহাস, কিন্তু তার সাথেই সমান্তরালে প্রবাহিত হয়েছে মাকোন্দা নগরের ইতিহাস – যার গোড়াপত্তন করেছেন বুয়েন্দিয়া পরিবারের প্রথম পুরুষ হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়া। একটা দুর্গম স্থানে কিছু দুঃসাহসিক মানুষের নগর পত্তন, সেই নগরের ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিচিত্র যৌনতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বাইরের সাথে যোগাযোগ, দেশময় গৃহযুদ্ধের সর্বগ্রাসী প্রভাব, শিল্পায়ন, সামাজিক অপরাধ, শ্রেণী সংগ্রাম – অসাধারণ দক্ষতায় ফুটে ওঠে। বস্তুত, মাকোন্দা নগর আর বুয়েন্দিয়া পরিবারের নিয়তি একই সুতোয় গাঁথা এবং তাদের পরিণতিই উপন্যাসটির গতিমুখ নির্ধারণ করে দেয়।