ফারুক চৌধুরী তাঁর বই শুরু করেছেন খুবই সাবধানে। জীবনের বালুকাবেলায় বইটি তিনি শুরুই করেছেন উৎসাহী পাঠকের অত্যধিক প্রত্যাশার গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে। পাঠককে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন : প্রথাগত অর্থে এই বই কোনো আত্মজীবনী নয়। আমার মতো একজন সাধারণ জীবনযাপনকারীর পক্ষে তা লেখা ধৃষ্টতাই হবে। আকাশে আমার উড্ডয়নের কোনো ইতিহাস রচনার ক্ষমতা থেকে আমি বঞ্চিত রয়ে গেছি। এই বইয়ে আমার জীবনকে কেন্দ্র করে আমার অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার পরতে পরতে কতগুলো বৃত্ত রচনার প্রয়াস নিয়েছি। তা-ও সব সময় আমার জীবনের চলার পথের ক্রমান্বয়তায় যে করেছি, তা নয়। আমি তা করেছি জীবনের বালুকাবেলায়, ইতস্তত বিচরণ করে গল্প বলার অবাধ স্বাধীনতায়।
কোনো পরিসরে বিস্তৃত হলে যে স্মৃতিকথার আত্মজীবনীতে উত্তরণ ঘটে, সে বড় জটিল ও সূক্ষ্ম বিতর্ক। আত্মজীবনী বিচিত্র। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের আত্মজীবনী বিপুল, কমলা দাসের চটি। জাঁ জাক রুশোর আত্মজীবনী নিজের সম্পর্কে নেতির প্রচারে উন্মুখ, পাবলো নেরুদার অকপট, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েরটি সতর্ক ও আংশিক উন্মোচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনীতে নির্জলা ঘটনাবস্ত্তর পরিমাণ অতি-সামান্য, তা যেন অন্তর্লোকের দীপ্তিময় উন্মেষের এক বস্ত্তভারহীন বিবরণ।