ছড়ার দেশে হেসে হেসে
লেখালেখির জগতে নাজিয়া জাবীনের আগমন তার পিতা অধ্যাপক সৈয়দ মকসুদ আলীর সূত্রে। সব ধরনের লেখাতেই সিদ্ধহস্ত বাবার পথ ধরে কন্যা লিখেছেন শিশুতোষ ছড়ার সংকলন ‘ছড়ার দেশে হেসে হেসে’।
শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য ছড়ার তাৎপর্য অনস্বীকার্য। ছড়া যে কেবল শিশুদের চিত্তবিনোদনের খোরাক জোগায় তা-ই নয়, শিশুমনে বিবিধ বিষয়ে শিক্ষার ছাপও ফেলে ছড়া। লেখিকা বইটির ছড়াগুলি লেখার সময়ে এই কথা মাথায় রেখেছেন ভালোভাবেই।
মোট ১০টি ছড়া রয়েছে ‘ছড়ার দেশে হেসে হেসে’ বইটিতে। যথাক্রমে : ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘কিছু প্রশ্ন’, ‘বর্ষা এল’, ‘নীল আকাশের বুকে’, ‘একুশ এলেই’, ‘রুপালি জাল’, ‘পাখির বিয়ে’, ‘রাজার রাজা’, ‘আছে ভয়’ আর ‘দিও না তো ফাঁকি’। ছড়াগুলি সংক্ষিপ্ত এবং মজার। ২০ পৃষ্ঠার বইটি কলেবরে ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু এই অভাব বহুগুণে পুষিয়ে দিয়েছে বিষয়বস্তুর ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য। লেখিকা সচেতনভাবে নানা বিষয়ের সন্নিবেশ করেছেন ছড়াগুলিতে। উঠে এসেছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা, আমাদের গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এবং মহান ভাষা-আন্দোলনের কথা। খেলাচ্ছলে লেখিকা শিশুদের দিয়েছেন বাস্তবতা বিষয়ক সচেতনতার প্রাথমিক পাঠ।
চলছে ছুটে ছড়ার গাড়ি
শিশু সাহিত্যের অন্য যেকোনো শাখার তুলনায় ছড়া সাহিত্য খুব সংবেদনশীল এবং তাৎক্ষণিক অনুভূতিতে ঢেউ তুলতে সক্ষম। শিশুতোষ ছড়ার মূল প্রাণ শব্দের ব্যঞ্জনা। যে বিষয় শিশু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে বুঝবে না, আকারে-ইঙ্গিতেও বোঝানো সহজ নয়; সে বিষয়ও শিশু অনুপ্রাসের মর্মে গেঁথে নিতে পারে খুব সহজে। এর জন্য অভিভাবক কি শিক্ষককে প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে হয় না। সেই রকম একগুচ্ছ ছড়ার সমাহার নিয়েই নাহার আহমেদের এই ছড়ার বই।
‘চলছে ছুটে ছড়ার গাড়ি’ নামের ডিমাই সাইজের এই ছড়ার বইটাতে মোট ২২ টি ছড়া আছে। এই ছড়াগুলির নামও অনেক সুন্দর ও রকমারি, যথা : ১. বায়না, ২. বইমেলা, ৩. বৃষ্টির ছড়া, ৪. চেনা ছবি, ৫. ছন্দে ছন্দে গোনা, ৬. দাদুর টাক, ৭. দাঁড়কাকের শাস্তি, ৮. দুই বামনের কথা, ৯. হাঁদারামের বোকামি, ১০. হলদে পাখির ছানা, ১১. ইষ্টিকুটুম পাখি, ১২. জাদুর তুলি, ১৩. মাতৃভাষা বাংলা, ১৪. মেঘের মেয়ে, ১৫. নাতি দাদুর ছাতি, ১৬. ভূতের বনভোজন, ১৭. পাজি বিড়াল, ১৮. পাজি ইঁদুর, ১৯. রামছাগলের দাদা, ২০. শিল্পী আমাদের খোকা, ২১. স্বপ্ন ও ২২. টুনটুনি পাখি।
নোটন নোটন ছোটন পাখি
রফিকুন নবী রচিত ছড়া ও ছবির বই ‘নোটন নোটন ছোটন পাখি।’ এই অসাধারণ চিত্রময় ছড়ার বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশনস্। আর্ট কার্ডে ছাপা শক্ত মলাটের ৪৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ে রয়েছে ৪২টি ছড়া, আর প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে রয়েছে সচিত্রকরণ। বইটির প্রচ্ছদও এঁকেছেন লেখক নিজে।
রফিকুন নবী সমকালীন শীর্ষস্থানীয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর অসাধারণ সৃষ্টি ‘টোকাই চরিত্রের মাধ্যমে তিনি ‘রনবী’ নামে সকলের কাছে বহুল পরিচিত। শিল্পী যখন কার্টুনিস্ট‘টোকাই’ চরিত্র দিয়ে অনেক অপ্রিয় সত্য হাসি-ঠাট্টার ছলে আমাদের সামনে তুলে ধরেন। তেমনি কবি হিসেবে চারপাশের নানান অসংগতি তার স্বভাবসুলভ রম্য উপস্থাপনায় তুলে ধরেছেন পাঠকের সামনে এই বইয়ের বেশ কিছু ছড়ায়। তৈরি করেছেন ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি, ট্র্যাফিক জ্যাম, লোডশেডিং নিয়ে ছড়া। আবার ছন্দ তাকে তাকে সাজিয়ে দৃশ্যমান করেছেন অপরূপ বাংলার প্রাকৃতিক রূপ। আছে দৈত্য-দানব, ভূতের ছড়া, মাতৃভাষা আর ঊনসত্তরের ইতিহাস, কোন রঙের কী মানে, সাপ, বাঘ, জঙ্গল, পাখিদের গান ইত্যাদি। মোটকথা মানুষ-প্রকৃতি-দেশ ছড়া হয়ে উঠে এসেছে এক মলাটে। অল্প কথায় শিশুমনের আবেগ অনুভূতি, বিশ্বচরাচরের নানা সংলগ্ন ও অসংলগ্ন বিষয়ে শিশুমনে যে প্রশ্ন সতত জাগরুক, তার উত্তর আপাতত সচেতন অভিভাবক মহলে থাকে না, যা এইসব ছড়ার জগতেই পাওয়া সম্ভব।
টরে টরে টক্কা
সৈয়দ শামসুল হক রচিত শিশুতোষ ছড়ার বই ‘টরে টরে টক্কায়।’ আর্ট কার্ডে ছাপা রঙিন মলাটের ৪৮ পৃষ্ঠার এই বইটিতে মোট ১০টি ছড়া আছে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী রফিকুন নবী। বইটির প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশন্স।
সৈয়দ শামসুল হকের ছড়ায় বিষয়-বৈচিত্র্য, কল্পনার বৈভব, হাস্যরসের দ্যোতনা, ছন্দনৈপুণ্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বাংলার শিশুদের আবেগ, স্বপ্ন-কল্পনা, বেদনা, হতাশা, কৌতূহল থেকে শুরু করে তাদের চারপাশের চেনা জীবন-জগৎ, জনমানুষ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বীরগাথা, প্রকৃতি, উৎসব-পার্বণ ইত্যাদি ছড়াগুলোর বিষয়-অনুষঙ্গ। বিচিত্র বিষয়বস্তু উপস্থাপনার চমৎকারিত্বে পেয়েছে অপূর্ব ব্যঞ্জনা। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গীতিময় ছড়া যেমন আছে, তেমনি আছে চমকপ্রদ আখ্যানধর্মী ছড়া, কোনোটি আবার নিটোল হাস্যরস প্রধান। তবে সব লেখার লক্ষ একটাই- শুভ, কল্যাণবোধ জাগিয়ে তোলা ও নির্মল আনন্দ দান করা।